ড. জাফর ইকবাল হত্যাচেষ্টা মামলায় একজনের যাবজ্জীবন

0

খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল হত্যাচেষ্টার আলোচিত মামলায় আসামি ফয়জুল হাসানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মামলার অপর আসামি ও ফয়জুলের বন্ধু সোহাগ মিয়ার চার বছরের কারাদণ্ড ও বাকিদের খালাস দেন আদালত।

আজ মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক নুরুল আমীন বিপ্লব এ রায় ঘোষণা করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মমিনুর রহমান টিটু।

তিনি বলেন, ‘রায়ে আসামি ফয়জুল হাসানের যাবজ্জীবন এবং ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ফয়জুলের বন্ধু সোহাগকে চার বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বাকি চার আসামিকে খালাস দেন আদালত। ‘

মামলার রায়ে আদালত বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো পবিত্র স্থানে উৎসবমুখর পরিবেশে আসামি পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ভিকটিমকে হত্যার উদ্দেশ্যে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করেন। তার এই কাপুরুষোচিত হামলা উপস্থিত ছাত্র-শিক্ষক-জনতা তথা দেশবাসীকে হতভম্ভ করেছে। ইসলাম ধর্মের প্রকৃত মর্মবাণীকে না বুঝে নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করাকে পূণ্যের কাজ মনে করে আসামি এই বর্বর হামলা চালিয়েছে। তার এহেন কাজ নিঃসন্দেহে একটি সন্ত্রাসী কাজ; আরো সুস্পষ্টভাবে বললে ধর্মীয় সন্ত্রাস ছাড়া আর কিছু নয়। ‘

মামলার অন্য আসামিরা হলেন ফয়জুলের বাবা মাওলানা আতিকুর রহমান, মা মিনারা বেগম, মামা ফজলুল হক ও ভাই এনামুল হাসান।

২০১৮ সালের ৩ মার্চ বিকেলে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠান চলার সময় ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলা হয়। ফয়জুল হাসান নামের এক যুবক ছুরি দিয়ে ড. জাফর ইকবালের মাথা ও ঘাড়ে উপর্যুপরি আঘাত করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছাত্র-শিক্ষকরা হামলাকারীকে হাতেনাতে ধরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সোপর্দ করেন। পরে জাফর ইকবালকে আহত অবস্থায় প্রথমে এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।  

এ ঘটনায় শাবি রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন বাদী হয়ে জালালাবাদ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন। ২০১৮ সালের ১৬ জুলাই ফয়জুলসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জালালাবাদ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম। ওই বছরের ৪ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হয়।

মামলায় মোট ৫৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৫ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। সর্বশেষ সাক্ষ্য দেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক এম এ মামুন। গত ২০ মার্চ আলোচিত এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। এরপর গত ২১ ও ২২ মার্চ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। এ মামলার ছয়জন আসামির সবাই বর্তমানে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। ২২ মার্চ উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে সিলেট বিভাগীয় সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক নুরুল আমীন বিপ্লব রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ করেন।

একটি উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে