রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড হয়ে বছিলার দিকে যেতে চার রাস্তা মোড় এলাকায় টিসিবির ট্রাক। সেখানে শতাধিক মানুষের জটলা। সবাই সাশ্রয়ী দামে ভোগ্য পণ্য কিনতে মরিয়া। অসহায় চোখে দাঁড়িয়ে দেখছেন সন্তান কোলে হাফিজা খাতুন।
হাফিজার হতাশার কারণ সয়াবিন তেল না পাওয়া। বাড়ির কাজকর্ম তড়িঘড়ি করে সেরে টিসিবির ট্রাক ধরতে বেরিয়েছিলেন তিনি। গতকাল বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পৌঁছান তিনি। তার আগেই সয়াবিন শেষ। সামান্য কিছু পেঁয়াজ ও মসুরের ডাল ছিল ট্রাকে, তা নিয়েই চলছিল কাড়াকাড়ি। তাই হাফিজা ভেবে পাচ্ছিলেন না, কী করবেন। তার মতো আরো অনেক নারীর মুখে ফুটে ওঠে অসহায়ত্ব।
রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের পাশে টিসিবির ট্রাকের পেছনে দীর্ঘ সারি। সকাল থেকে শুরু হয় পণ্য বিক্রি। কিন্তু সারি ছোট হয় না। এর বেশির ভাগই নারী।
অবশ্য জাতীয় প্রেস ক্লাব ও সচিবালয়ের মধ্যবর্তী সড়কে টিসিবির ট্রাকের পেছনে দাঁড়ানো ব্যক্তিদের বেশির ভাগই পুরুষ। গাড়ির চালকরা রাস্তার দুই পাশে গাড়ি রেখে ট্রাকের পেছনে দাঁড়িয়ে যান।
মোহাম্মদপুরে টিসিবির ট্রাকের পাশেই কথা হয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আফছার উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জানান, আগের দুই দিন অফিসে হাজিরা দিয়ে এসে পণ্য কিনতে পারেননি। তাই গতকাল অফিস থেকে অনুমতি নিয়ে সকালেই লাইনে দাঁড়িয়েছেন। ডাল, পেঁয়াজ ও চিনির সঙ্গে দুই লিটার সয়াবিন কিনতে পেরেছেন, এতেই খুব খুশি তিনি।
বস্তিবাসী শরিফা বলেন, করোনার পর থেকে আয় কমেছে। তাই মাছ-মাংস খাওয়ার সুযোগ নেই। তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সবজিও রান্না করতে পারেন না। ভর্তা-ভাত খেয়ে দিন কাটে। তার অভিযোগ, অনেকেই প্রতিদিন আগে এসে তেল কিনে নিয়ে চলে যায়।
অভিযোগ অস্বীকার করেছেন টিসিবি ডিলারের বিক্রয়কর্মী ফসিয়ার রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা নির্ধারিত সংখ্যক ব্যক্তির কাছে পণ্য বিক্রি করে থাকি। কিন্তু কেউ প্রতিদিন কিনছে কি না, বলতে পারব না। তবে এক দিনে কেউ যাতে একাধিকবার নিতে না পারে, সে বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি। ’ তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে যে পণ্য থাকে, তা প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ মানুষকে দিতে পারি। কিন্তু লাইন ধরে ৪০০ থেকে ৫০০ মানুষ। ’
এ বিষয়ে ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যেখানে টিসিবির ট্রাক, যতক্ষণ ট্রাকে মালপত্র থাকে, আমরা মানুষকে দিই। মান ভালো ও দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় টিসিবি পণ্যের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। ’